আবার অনেকদিন পর ফিরে এলাম। আসলে উনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখায় ব্যস্ত ছিলাম কিনা 😯 তাই আর কি……
এই পর্বে আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন রকম স্বপ্ন ও তার প্রভাব নিয়ে। স্বপ্নের মধ্যে হাটাহাটি বা ঘোরাঘুরির পরিণতি যে কি ভয়াবহ তা পর্ব-৩ এ আপনারা দেখেছেন। এখন যেটা নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল স্বপ্ন দেখার পর অর্থাৎ সচেতন অবস্থায় স্বপ্নের প্রভাব।
ইতিহাস বলছে স্বপ্নের প্রভাবে অনেক সময় পৃথিবীর বড় বড় কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে ধর্মীয় দিক দিয়েই চিন্তা করুন।
পুরাণের কাহিনী গুলোতে কত শত মুনি ঋষির পরিচয় পাওয়া যায় যারা স্বপ্নের মাধ্যমে দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছেন। সেই সুদূর হিমালয়ের উঁচু কোন স্থান থেকে শুরু করে গভীর অরণ্যে, বহু মুনি ঋষি স্বপ্নের দীক্ষা প্রাপ্ত হয়ে ধ্যানে বসেছিলেন।
ইসলাম ধর্মে মানুষকে নামাযের আহবান জানানোর জন্য যে আযান দেয়া হয় এবার তার ইতিহাস বলি শুনুন,
মহানবী (সঃ) মদিনাতে হিজরত করার পরে মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেই সকলের জামায়াতের সাথে নামায আদায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। কিন্তু সমস্যা হল নামাযের সময় সকলকে একত্র করার কোন ভাল পদ্ধতি ছিল না। তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবাগনদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করলেন। তাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উঠেছিল। যেমন:
- নামাযের সময় হলেই পতাকা উড়ানো হবে
- আগুন জ্বালানো হবে
- বাঁশি বা সাইরেন জাতীয় কিছু বাজানো হবে
- ঢাক ঢোল বাজানো হবে ইত্যাদি
কিন্তু কোন প্রস্তাবই মন মত না হওয়ায় গৃহীত হয় নি। সভা সেদিনের মত শেষ হল কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই, সে দিন রাতেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি শিঙ্গা (বড় বাঁশি) হাতে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি সেই ব্যক্তিকে বললেন, “শিঙ্গাটি আমার কাছে বিত্রিু কর, আমি এর মাধ্যমে মানুষকে নামাযের আহবান করব” তখন সেই লোকটি যায়েদকে বলল যে, “আমি তোমাকে এর চেয়েও উওম পদ্ধতি দিব কি?” তারপর তাকে আযানের বাক্যগুলো বলেন সেই ব্যক্তি। রাত শেষ হলে তিনি মহানবী (সঃ) কে সব খুলে বলেন। মহানবী (সঃ) এর সততা স্বীকার করে হযরত বেলাল (রা:) কে তা শিখিয়ে দিতে বলেন। হযরত বেলাল (রা:) যোহরের আযান দিলে, হযরত ওমর (রা:) বললেন যে তিনিও একইরকম স্বপ্নে দেখেছেন। এরকম এই স্বপ্ন, একই রাতে, একই সাথে ১৪ সাহাবী দেখেন। তখন থেকেই আযানের প্রথা চালু হয়।
এবার একটু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দিকে যাই। সেলাই মেশিন দেখেনি এমন মানুষ সম্ভবত অন্য কোথাও থাকলেও বাংলাদেশে নেই। চলুন জেনে নিই এর আজব এক স্বপ্ন কেন্দ্রিক জন্ম ইতিহাস।
এলিয়াস হাউস। জাতে আমেরিকান। সে সময় সেলাইয়ের সকল কাজ করা হত হাতে। হাউস চিন্তা করলেন এত কাজ যখন যন্ত্রের সাহায্যে হয়
তখন সেলাই কেন করা যাবে না। গবেষণা শুরু করলেন তিনি। সবই ঠিক ছিল কিন্তু সুতা সহ সুইটাকে কাপড়ের এফোঁড় ওফোঁড় করতে যেয়ে মস্ত ঝামেলায় পড়লেন তিনি। কারণ সুইয়ের পিছনের দিকে ছিল সুতার জন্য ছিদ্র। এ নিয়ে তিনি মহা চিন্তিত। একদিন রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, এক রাজা তাকে বন্দি করে রেখেছে এবং তাকে নির্দেশ দিল, “এখনই সেলাই কল বানিয়ে দিতে হবে” স্বপ্নে সেলাই কল বানানো গেল না। হাউসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। স্বপ্নেই কয়েকজন বল্লম নিয়ে তাকর মারতে আসতে লাগল। হাউস দেখলেন বল্লমের কাটার মাথায় ফুটো। তখনই তার ঘুম ভেঙে গেল। চিন্তা করলেন, আসলেই তো! সুইয়ের পিছনে ফুটো না দিয়ে মাথায় ফুটো করলেই তো অনেকটা সহজ হয়ে যায় সেলাই!!! ব্যস….. তৈরি হয়ে গেল সেলাই মেশিন। সেটা যে পৃথিবীতে কি বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে তা সুস্থ মানুষ মাত্র সকলেরই জানা আর এত বড় পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে ছোট্ট একটা স্বপ্ন।
এবার আসুন দেখি স্বপ্নের প্রভাবের ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে! বিজ্ঞান বলছে কিছু কিছু মানুষের মন থাকে খুবই স্পর্শকাতর, যে কারণেই এ রকম মানুষের উপর স্বপ্নের প্রভাব বেশি থাকে। এতটাই বেশি থাকে যে স্বপ্ন দেখা অবস্থায় হাটা, চলা, ঘুরাঘুরি, হাসি, কান্না এমনকি খুন পর্যন্তও করতে পারে একজন মানুষ। স্বপ্নের প্রভাবে মাঝে মাঝে দুর্দান্ত সাহসী মানুষও অনেক সময় প্রচণ্ড ভড়কে যায় এমনকি হার্ট অ্যাটাক করে মারা পর্যন্ত যেতে পারে। আমেরিকার নিউ ইয়র্কে থাকতেন এক ভদ্রলোক।………….
না, থাক সে গল্পগুলো না হয় আগামী পর্বগুলোতেই বলি। বিদায়……
পরের পর্ব