ডোরেমন, ডোরাকেক ও ডোরা কাটা বাঘ. (হালুম-১,২,৩)

by saif

শিরোনামের মধ্যে থাকা তিনটি নামের মধ্যে ১ম দুইটি প্রায়ই সবাই মনে হয় চিনে গেছেন।একটি হল পিচ্চি পোলাপাইনের Craze ডোরেমন ও আরেকটা ডোরেমনের প্রিয় খাবার ডোরা কেক।তবে তৃতীয়টি হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না ( 🙄)।এটি আমাদের জাতীয় পশু Royal Bengal Tiger…… আসলে ডোরেমন নামক বিড়ালের তোড়জোড়ে আমাদের নিরীহ বাঘটি ইদানীং নিতান্তই অসহায়।

অর্থাৎ বাঘ থেকে বিড়াল হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট্ট প্রজন্ম!!!রাগ করবেন না, পড়তে থাকুন বুঝতে পারবেন।

আসুন প্রথমেই পরিচিত হয়ে নেই ডোরেমন ও তার সহ-চরিত্র গুলো সম্পর্কে….

![ডোরেমন](https://c1.staticflickr.com/9/8278/15606491429_aa5b5cf179_b.jpg "ডোরেমন")
**ডোরেমন:** এ হল বিড়ালের মত দেখতে 22nd শতাব্দীর রোবট।

সে বিড়াল হলেও ভয় পায় ইঁদুর।কারণ, তার কান দুটো ইঁদুর খেয়ে নিয়েছে।তার রয়েছে একটি 4D পকেট।যেখানে সে তার অসাধারণ গ্যাজেট গুলো রাখে।ডোরেমনকে “নোবিতা নোবি” এর নাতি 22nd শতাব্দী থেকে এ সময়ে পাঠিয়েছে। “নোবিতা” কে সাহায্য করার জন্য।

![নোবিতা নোবি](https://sites.google.com/site/noeyiizsc/_/rsrc/1392054947748/nobita-nobi/Nobita-Doraemon4.jpg "নোবিতা নোবি")
**নোবিতা:** ইনি হচ্ছেন গল্পের একজন প্রধান চরিত্র।পুরো নাম “নোবিতা নোবি”। দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি ছেলে। যে সবসময়ই পরীক্ষায় “০” (শূন্য) পায়।প্রচণ্ড মিথ্যে কথা বলে এবং ডোরেমনের সাহায্য ছাড়া কিছুই পারে না।তার প্রতিদিনের রুটিন-

অন্য চরিত্র গুলোর একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেয়া হল:

![](https://alchetron.com/cdn/doraemon-character-ebfcc5d3-cb4f-4d90-aba6-39345dc26c4-resize-750.jpeg "ডোরেমনের অন্যান্য চরিত্র")
**ডোরামি:** ডোরেমনের বোন।এর কিন্তু কান আছে!!

সুজুকা: প্রধান মেয়ে চরিত্র। নোবিতার ভবিষ্যৎ স্ত্রী।

সুনিয়ো: মিথ্যাবাদী, প্রতারক, অহংকারী ছেলে।

জিয়ান: মোটা, শক্তিশালী, অন্যের উপর রাগ দেখানো ও অসাধারণ গানের গলার অধিকারী আমেরিকান নিগ্রো।

ডেকিসুগি: সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও ভাল ছাত্র।সবদিক থেকে একজন আদর্শ ছেলে।

হয়তোবা খেয়াল করেছেন যে চরিত্র গুলোর নেগেটিভ আচরণ গুলো বেশি।সবাই তো বুঝি।কিন্তু তাও কিছু করতে পারিনা কেন? কীভাবে পারবো বলুন, বাঙালী হিসেবে আমাদের আজ তো নিজের বলে কিছুই নেই।নিজেদের সংস্কৃতির থেকে দূরে থাকতে থাকতে আমরা কেমন জানি সংস্কৃতহীন বা মিশ্র সংস্কৃতির একটা জাতি হয়ে গেছি।রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নখ যেন কেমন ভোতা হয়ে গেছে।

প্রথমে চলুন আমরা ছোট্ট একটা Experiment করি। ২য় বা ৩য় শ্রেণীতে পড়া কোন শিশুকে ডোরেমন দেখার সময় বলুন যে, “চলো বাইরে খেলতে যাই” গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি উওর আসবে “না, আমি এখন ডোরেমন দেখছি”

![একটি শিশু ডোরেমন দেখছে](https://imgcacheblog.instube.com/2019/01/Doraemon-movie-4.jpg)
একটি শিশু ডোরেমন দেখছে

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বাইরের আবহাওয়ায় খেলাধুলা জরুরি। কীভাবে হবে…… ডোরেমন যে তার গ্যাজেটের জাদুতে বন্দি করে ফেলেছে আমাদের ছোট্ট প্রজন্মকে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, শিশুর পারিপার্শ্বিক মানুষজন ও পরিবেশ তার উপর প্রচুর প্রভাব ফেলে। ডোরেমন আর নোবিতার ডজন ডজন মিথ্যে কথা আর পরনির্ভরশীলতা আমাদের শিশুদের যে কী পরিমাণ ক্ষতি করছে তা বুঝতে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।

ডোরেমন সবচেয়ে বড় কুপ্রভাব হচ্ছে ভাষা বিকৃতি।বর্তমানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিশুই বাংলার চেয়ে সম্ভবত হিন্দি বেশি পারে। না পারলেও তাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকে হিন্দি শেখার।কারণ ডোরেমন যে হিন্দিতে কথা বলে।

ধীরে ধীরে আমাদের ছোট্ট প্রজন্মের সম্ভবত সত্ত্বাকেই যেন কব্জা করে নিচ্ছে ডোরেমন। আজকের শিশুরা নিজে কিছু চিন্তা করতে পারে না।যা কিছু তাদের কাছে কঠিন লাগে তখনই তাদের মনে হয় যদি ডোরেমন থাকত!!! আগে যেখানে শিশুরা আকাআকি করে, গান গেয়ে, খেলাধুলা করে নিজেদের সৃজনশীলতার বিকাশ করত সেখানে এখন তো তাদের ডোরেমন দেখতে দেখতেই দিন পার। আগে বিকালে বা অন্য অবসর সময়ে শিশুরা হয় কিছু আকাআকি করত বা কিছু তৈরি করতে চেষ্টা করত। কিন্তু এখন তারা সে সময়টুকু নষ্ট করছে ডোরেমন দেখে। ডোরেমন তার গ্যাজেট দিয়ে নোবিতার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আমাদের নতুন প্রজন্মে সৃষ্টি করছে নতুন নতুন সমস্যা।

প্রথম থেকে যারা এ লেখা পড়ে আসছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জেগেছে যে আমি লেখার পর্বগুলোর নাম হালুম দিয়েছি কেন…. আসলে ডোরেমন এর বিড়াল, Spider Man এর মাকড়সা, Bat Man এর বাদুর এদের তোড়জোড়ে আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর হালুম ডাকটা বড়রাও ভুলে যাচ্ছে। আর ছোটদের মধ্যে অনেকে তো বাঘ যে হালুম ডাকে তা জানেই না। সেটা মনে করিয়ে দিতেই আমার পর্বগুলোর নাম হালুম দিলাম।

![](https://www.sunderbannationalpark.in/blog/wp-content/uploads/2018/08/Royal-Bengal-Tiger.jpg)
এতক্ষন তো ডোরেমন কে বহু দোষারোপ করা হল। কিন্তু ডোরেমন-এর প্রতি শিশুদের এই আসক্তি সৃষ্টির পিছনে দায়ী কে জানেন? আমরাই দায়ী। হ্যাঁ, আমরাই দায়ী। ভেবে দেখুন আগে একটি শিশুকে তার বাবা-মা অনেকটা সময় দিত, সপ্তাহে একদিন ছুটির দিনে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে আসা হত দূরে অথবা কাছাকাছি কোথাও। শিশুকে বুঝতে দেয়া হত তার চারপাশটা, তার চারপাশের মানুষগুলোকে। কিন্তু বর্তমানে যান্ত্রিকতার এই যুগে মেগা সিটি নামক কংত্রিুট-এর অরণ্যে বাবা-মা এতটাই ব্যস্ত যে, নিজের সন্তানটির জন্য এতটুকু সময় তাদের হাতে থাকে না। পরিণামে বাড়ছে কিশোর অপরাধ আর শিশুদের মধ্যে বাড়ছে টিভি কেন্দ্রিক বিনোদন আসক্তি। ডোরেমন-এর উপর দোষ কোথায় বলুন, তাকে তো উল্টো আমাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ। যে আনন্দটুকু শিশু তার বাবা-মার কাছ থেকে পাওয়ার কথা, সেই আনন্দের ঘাটতিটুকু মেটাচ্ছে ডোরেমন। অন্তত আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের পাপগুলোকে একটু হলেও আড়াল করে রাখছে ডোরেমন। আজ সময় এসেছে বদলাবার। বসে বসে শুধু স্যাটেলাইটের দোষ না ধরে বদলাতে হবে নিজেকে। শিশুকে তার চারপাশটা বুঝতে দিন। তাকে বুঝতে দিন কি অপার সৌন্দর্য, সম্ভাবনার দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। সারাদিন বসে বসে হিন্দি ফিল্ম বা সিরিয়াল না দেখে শিশুকে দেশটা দেখান দেশের মানুষকে দেখান সাথে নিজেও দেখুন।

বাড়ির কাজের লোকটার প্রতি বাজে আচরণ না করে নিজেও বুঝুন আর শিশুকেও বোঝান যে, তারাও মানুষ। শিশুর মন বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলেই দেখবেন আমাদের বাঘ ঠিকই হালুম ডাকবে আর সেই গর্জন শুনবে সারা বিশ্ব। তখন ডোরেমন, ডোরাকেক রেখে শিশুদের সাথে আমরাও ডোরা কাটা বাঘকে চিনব। মনে পড়বে একদিন কবি বলেছিলেন,

শাবাশ বাংলাদেশ

এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

আরো দেখুন


EduportalBD Mobile App

Official mobile app by Eduportalbd.com. Get EIIN number, EMIS code, contact info, address, and tons of other information about any educational institutions in 5 countries.

App download Call to Action