এখন থেকে প্রতি ঈদের দিন সন্ধ্যা ৭:৫০ মিনিটে অপেক্ষা করে থাকবো না চ্যানেল আইতে হওয়া বিশেষ নাটকটির জন্য। এখন থেকে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘আমার আছে জল’ এর মত সিনেমা দেখার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা হবে না। এখন থেকে বই মেলায় গেলেই আর অন্যপ্রকাশের স্টলে ঢুঁ মারা হবে না। এখন থেকে আর অপেক্ষা করে থাকবো না মিসির আলীর জমজমাট কোনো রহস্যের উন্মোচনের। এখন থেকে হিমুর উদ্ভট কিন্তু আকর্ষণীয় কার্যাবলী দেখে নিজেকে হিমু ভাবতে ইচ্ছে করবে না। এখন থেকে হয়তো আর তেমন একটা বই পড়া হবে না।
মানুষ নিন্দিত এবং নন্দিত উভয়ই হয় নিজের গুণাবলীর জন্য। ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো তিনি অনেক মানুষের চক্ষুশূল কিন্তু লেখক হিসেবে বাংলা লেখায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন তিনি। সেই তিনিই কোটি ভক্তকে কাদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। 🙁
বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি। দুই পর্বে মোট ১২টি কেমো থেরাপি নেওয়ার পর ১২ জুন ২০২২ বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার হয়।
অস্ত্রোপচারের পর ১৯ জুন ২০২২ বাসায় ফিরেছিলেন এই লেখক। স্ত্রী শাওনসহ সন্তানদের নিয়ে কুইন্সে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন তিনি। বাসায় ফিরলেও অবস্থার অবনতি ঘটলে পুনরায় বেলভ্যু হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। ২১ জুন ২০২২ তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার হয়। এরপর গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন তিনি।
২০ জুন ২০২২ রাত ১১.২০ মিনিটে(বাংলাদেশ সময়ে) তিনি ফিরে না আসার দেশে চলে গেলেন।জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম এ মোমেন বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখক হুমায়ূন আহমেদের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
Table of contents
Open Table of contents
একনজরে তাঁর পরিচিতি
- জন্ম : ১৯৪৮, ১৩ নভেম্বর৷ নেত্রকোণা জেলার কুতুবপুর গ্রামে৷
- ডাকনামঃ কাজল
- বাবা: ফয়জুর রহমান আহমেদ৷
- মা: আয়েশা ফয়েজ৷
শিক্ষা :
- মাধ্যমিক, বগুড়া জিলা স্কুল, ১৯৬৫৷ -উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ, ১৯৬৭৷ -স্নাতক (সম্মান) রসায়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭০৷ -স্নাতকোত্তর (রসায়ন) ১৯৭২৷ -পি এইচ ডি, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি, ১৯৮২৷ -পেশা : অধ্যাপনা, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর,পরবর্তীতে লেখালেখি ও চলচ্চিত্র নির্মাণ৷
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস :
নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, নী, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি৷
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র :
আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত৷
পুরস্কার :
একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮)৷ দেশের বাইরেও হয়েছেন মূল্যায়িত৷
বৈবাহিক জীবন
হুমায়ূন প্রথম বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে গুলতেকিনকে। তাদের চার সন্তান হলেন নোভা, শীলা, বিপাশা ও নুহাশ। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বিয়ে করেন শাওনকে। এই দম্পতির দুই সন্তান নিষাদ ও নিনীত।
শেষ দিকে এসে জীবনের প্রতি তাঁর মায়া পড়ে যায়।খুব চেয়ে ছিলেন কিছুদিন বাঁচতে।ইচ্ছাছিল নিজ দেশে ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরী করবেন।
আমি কখনো অতিরিক্ত কিছুদিন বাঁচার জন্য সিগারেটের আনন্দ ছাড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভেবে রেখেছিলাম ডাক্তারকে বলব, আমি একজন লেখক। নিকোটিনের বিষে আমার শরীরের প্রতিটি কোষ অভ্যস্ত। তোমরা আমার চিকিৎসা করো, কিন্তু আমি সিগারেট ছাড়ব না। তাহলে কেন ছাড়লাম? পুত্র নিনিত হামাগুড়ি থেকে হাঁটা শিখেছে। বিষয়টা পুরোপুরিরপ্ত করতে পারেনি। দু-এক পা হেঁটেই ধুম করে পড়ে যায়। ব্যথাপেয়ে কাঁদে। একদিন বসে আছি। টিভিতে খবর দেখছি। হঠাৎ চোখ গেল নিনিতের দিকে। সে হামাগুড়ি পজিশন থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। তার ছোট্ট শরীর টলমল করছে। যেকোনো সময় পড়ে যাবে এমন অবস্থা। আমি ডান হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিতেইসে হাঁটা বাদ দিয়ে দৌড়ে হাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশ্বজয়ের ভঙ্গিতে হাসল। তখনই মনে হলো, এই ছেলেটির সঙ্গে আরও কিছুদিন আমার থাকা উচিত। সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত সেই মুহূর্তেই নিয়ে নিলাম।—–হুমায়ূন আহমেদ।