চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিচ্ছে সরকার

by saif

মালিকানা অথবা পদের দ্বন্দ্বে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে সরকার। পাঁচ দফায় আল্টিমেটাম দিয়েও অচলাবস্থা নিরসনে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ড ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অধ্যাদেশ অনুসারেই প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। :paint:

চারটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছেঃ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই চার প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবিদার সকল পক্ষকেই জানিয়েছে, ‘‘আমরা আমাদের সন্তানদের কোনো সংঘাতপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারি না।’’

জানা গেছে, আইন অনুসারে নিজস্ব কমিটি গঠন করে পরিচালনার মাধ্যমে বৈধ মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চারটিকে। তবে এর মধ্যে প্রাইম ইউনিভার্সিটির আসল মালিক খোঁজা নিয়ে চরম বেকায়দার রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ৫ দফা এ চার প্রতিষ্ঠানকে মালিকানার বিরোধ মিটিয়ে আসার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু আজ পর্যন্ত চার প্রতিষ্ঠান সরকারের আদেশে কর্ণপাত করেনি। বরং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সনদবাণিজ্য, দখল-পাল্টা দখলে অচলাবস্থার অভিযোগই বাড়ছে। এ অবস্থায় শিগগিরই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বৈধতাই প্রশ্নের মুখে:

মালিকানার দ্বন্দ্ব ও অর্থ লোপাটের ঘটনায় সঙ্কটের মুখে পড়ে অস্থির হয়ে উঠেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। কর্তৃপক্ষ বৈধ না অবৈধ এ আতঙ্কে শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া সনদপত্রের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ট্রাস্টিবোর্ডসহ পুরো পরিচালনা পর্ষদ, উপাচার্য এমনকি ট্রেজারারের বৈধতাও এখানে প্রশ্নের মুখে। অথচ ১১ বছর ধরে অধ্যাদেশ, প্রতিষ্ঠাতা ও বৈধ পরিচালনা পর্ষদকে বাইরে রেখেই নির্বিঘ্নে চলছে এর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে অস্থির অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়:

সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পরিবারের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যের দ্বন্দ্বের জের ধরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান-ও-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। উপাচার্য পদ নিয়ে এ বিরোধের কারণে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। গুলশান থানার বনানীর বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৮৩ নম্বর ৬তলা বাড়িতে এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়াটি অবস্থিত।

সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে একই পদের জন্য বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও আচার্য বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আইন অনুযায়ী তার এ পদে বসার আর কোনো সুযোগ নেই। বিধি মোতাবেক আবুল হোসেন শিকদার বর্তমানে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তা মানতে নারাজ সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার। এ নিয়ে বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে ইয়াজউদ্দিনের পরিবার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার উপাচার্য পদ নিজেদের দখলে রাখতে নানাভাবে তৎপর হয়ে ওঠে।

মালিকানার বিরোধে সংকটে প্রাইম ইউনিভার্সিটি:

মালিকানার বিরোধে সংকটে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাইম ইউনিভার্সিটির আসল মালিক খোঁজা নিয়ে বেকায়দার পড়েছে সরকার। এতোদিন মিরপুরের এক পক্ষ নিজেদের মূল মালিক বলে দাবি করলেও এবার উত্তরার পক্ষ দাবি করেছে, ট্রাস্টি বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তাদের। সুতরাং তারাই এখন বৈধ মালিক।

সম্প্রতি মিরপুরের পক্ষ ত্যাগ করে প্রাইম ফাউন্ডেশনের ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই উত্তরায় অবস্থিত প্রাইম ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগদান করেছেন এবং ট্রাস্টিরা উত্তরা ক্যাম্পাসেই মূল ক্যাম্পাস হিসাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান প্রাইম ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ট্রাস্টিজ ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মিরপুরে যে পক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন তাদের অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো ট্রাস্টিবোর্ডই নেই। ছিল একটি ফাউন্ডেশন। কিন্তু তারও ১৪ জনের ৮ জনই আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে উত্তরাতেই মূল ক্যাম্পাস চালানো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর বিরুদ্ধে মিরপুরের গ্রুপ আদালতে গেলেও মহামান্য আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় আমরাই বৈধতা পাই।’’

অন্যদিকে মিরপুরের পক্ষের ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর হাসাবুদ্দিন দাবি করেছেন, ‘‘আমরাই বৈধ। উত্তরায় আমাদের একটি শাখা ছিল, তা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। ইউজিসিও উত্তরা শাখাকে অবৈধ বলেছে। আমরাই মূল।’’

বিষয়টি নিয়ে বিব্রত অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলছেন, মিরপুর পক্ষ নিজেদের মূল মালিক বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন মামলা ও উত্তরা ক্যাম্পাসের ট্রাস্টি বোর্ড থাকার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।

একই অবস্থা ইবাইস ইউনিভার্সিটির

মালিকানার দ্বন্দ্বে জর্জরিত ধানমণ্ডির ইবাইস ইউনিভার্সিটিও। ইউজিসি জানিয়েছে, ইবাইস ইউনিভার্সিটির দ্বন্দ্ব মালিকানা নিয়ে। দুই ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দাবি করছেন। আর এ কারণে সৃষ্ট বিরোধে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

আরো দেখুন


EduportalBD Mobile App

Official mobile app by Eduportalbd.com. Get EIIN number, EMIS code, contact info, address, and tons of other information about any educational institutions in 5 countries.

App download Call to Action